Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভূমিঃ আপনার ঠিকানা



ভূমি আপনার ঠিকানা

ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি জনসচেতনতামূলক প্রকাশনা

প্রকাশকাল : মার্চ ২০২৩

প্রকাশনায় : ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন (ডিকেএমপি) অনুবিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয় ।




ভূমিকা 

বাংলাদেশের খুব কম মানুষই আছেন যারা ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েননি । অজ্ঞতার কারণে কারও জমি হয়তো ভুল রেকর্ড হয়ে গেছে । আবার কেউ ওয়ারিশদের সম্মতি যাচাই না করেই জমিটি ক্রয় করে মামলার সম্মুখীন হয়েছেন । কেউ আবার জমি কিনতে গিয়ে মামলাই কিনে ফেলেছেন। জমির পূর্ব ধারাবাহিকতা যাচাই না করে কেবল সর্বশেষ দাখিলা দেখে জমি ক্রয় করে অনেকের প্রতারিত হওয়ার খবরও শোনা যায়। সর্বোপরি, অনলাইনে নামজারি করানো, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে ডিজিটাল দাখিলা প্রাপ্তি, কলসেন্টার ১৬১২২-তে ফোন করে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ঘরে বসেই পর্চা গ্রহণ এখন জনপ্রিয় সেবা হলেও অনেকের কাছে এখনও বিষয়গুলো অজানা ।

এই প্রেক্ষাপটে ‘ভূমি - আপনার ঠিকানা' পুস্তিকাটি বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকগণের ভূমি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। স্মার্ট ভূমিসেবাসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের নানামুখী কর্মকান্ড সম্পর্কে দেশের সকল নাগরিক অবহিত হয়ে উন্নত ভূমিসেবা গ্রহণে আগ্রহী হোক - এটাই ভূমি

মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা ।


জরিপ: ভূমির মালিকানা ও ম্যাপ তৈরির মূল ভিত্তি

বাংলাদেশের কোন্ জমির মালিক কে তা সরকারকে জানতে হয়। ভূমির মালিকানা এবং মালিকানার উপর ভিত্তি করে ম্যাপ তৈরির উদ্দেশ্যে সরকার নির্দিষ্ট সময় পরপর জরিপ কাজ পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন নামে পরিচালিত এ সকল জরিপের রেকর্ড ছাপা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই উপমহাদেশে ১৮৮৯ সালের দিকে প্রথম ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভের (সিএস) সূচনা হয়। সিএস এখন পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ সঠিক বলে বিবেচিত। এরপর রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ভিত্তিতে স্টেট অ্যাকুইজিশন (এসএ) জরিপ সম্পাদিত হয়। এসএ জরিপের সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো হচ্ছে এই জরিপে খতিয়ান বা মালিকানার স্বত্বলিপি হাতে লেখা হয়েছে। এ জরিপে তৈরি করা হয়নি কোন ম্যাপ, এর খতিয়ানের নেই কোন মাস্টার কপি । ফলে দেশের অধিকাংশ মামলা-মোকদ্দমা সৃষ্টি হয়েছে এই জরিপকে কেন্দ্র করেই । এসএ জরিপের পর সম্পন্ন হয়েছে রিভিশন সার্ভে (আরএস) জরিপ। কোন কোন ক্ষেত্রে এটিকে বলা হয় বিআরএস জরিপ। ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রথমে সম্পাদিত হয় বিআরএস জরিপ এবং এরপর হয় সিটি জরিপ। জরিপের পর জমির মালিকানার উপর ভিত্তি করে যে কাগজে মালিকানার বিবরণ লেখা থাকে তাকে বলা হয় খতিয়ান। জরিপের নামানুসারে

খতিয়ানেরও নামকরণ হয়েছে যেমন: সিএস খতিয়ান, এসএ খতিয়ান, আরএস খতিয়ান ইত্যাদি।


জরিপ চলাকালীন আপনার করণীয়

জরিপ পরিচালনার সময় জমির মালিক হিসেবে আপনাকে অবশ্যই মালিকানার সপক্ষে বৈধ কাগজপত্রসহ জরিপ কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, জমির প্রকৃত অবস্থার উপর ভিত্তি করে ম্যাপ তৈরি হয় এবং মালিকানার কাগজপত্র দেখে রেকর্ড তৈরি হয় । কাজেই রেকর্ডের সময় সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারলে অনেক সময় ভুল রেকর্ড হয়ে যেতে পারে। তবে রেকর্ড ভুল হলে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এক্ষেত্রে সংশোধনের প্রক্রিয়াও খুব সুনির্দিষ্ট। রেকর্ডের সময় আপনাকে জরিপ বিভাগের কর্মকর্তাগণ হাতে লিখিত একটি খসড়া খতিয়ান বা মাঠ খসড়া খতিয়ান প্ৰদান করবেন। এটি সবুজ কালিতে স্বাক্ষরিত থাকে। আপনি মাঠ খসড়া খতিয়ানটি সংগ্রহ করবেন এবং এতে আপনার জমির বিবরণ সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে দেখবেন। ভুল থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে ভুল সংশোধন করিয়ে নিবেন।


জরিপে ভুল রেকর্ড হলে সমাধানের উপায়

জরিপ চলাকালীন ভুল রেকর্ড সংশোধনের দুটি ধাপ রয়েছে প্রচলিত ভাষায় যা ৩০ বিধি বা আপত্তি স্তর নামে পরিচিত। আপনি আপত্তি দেওয়ার পর একজন কর্মকর্তা এটি শুনানি গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন । এ সিদ্ধান্তের ওপর আপনার কোন আপত্তি থাকলে ৩১ বিধিতে আপিল করতে হবে। আপিলের সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে ছাপানো রেকর্ড প্রকাশের পরে রেকর্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। ট্রাইবুনালের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে ল্যান্ড সার্ভে আপিলেট ট্রাইবুনালে এবং পরে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করা যাবে। কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে পরের ধাপে না গেলে পূর্বের রায় চূড়ান্ত হবে।


জরিপের ছাপা রেকর্ডের গেজেট প্রকাশের পর নামজারি প্রক্রিয়া

একবার জরিপের রেকর্ডের গেজেট প্রকাশিত হবার পর যতবার জমি কেনাবেচা হবে বা অন্যভাবে মালিকানা পরিবর্তন হবে ততবারই উপজেলা ভূমি অফিস হতে নতুন ক্রেতার নামে নামজারি বা রেকর্ড সংশোধন করাতে হবে। তবে জরিপের গেজেট প্রকাশের পর ভুলটি যদি কেবল গাণিতিক বা কারণিক ভুল হয়, তাহলে সহকারী কমিশনার ভূমি-এর নিকট আবেদন করলে সংশোধন হতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে আমরা নামপত্তন বা নাম-খারিজ বা বলি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কাজটি সম্পাদন করে থাকেন। এই নামজারি মামলাটি আপনার সর্বশেষ রেকর্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত । বর্তমানে ই-নামজারি বা স্মার্ট নামজারির মাধ্যমে নামপত্তন করানো অনেক সহজ করা হয়েছে । একজন জমির মালিক হিসেবে জরিপ চলাকালে আপনার প্রধান দায়িত্ব হলো চোখ-কান খোলা রাখা। অর্থাৎ জরিপ সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা। বেশ কয়েকটি ধাপে জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রতিটি ধাপে আপত্তি বা আবেদন দিয়ে মালিকানা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি ধাপে স্বীয় স্বার্থ সঠিক আছে কিনা যাচাই করবেন।


ক্রয়সূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে করণীয়

রেকর্ডীয় মালিকানা যাচাই

রেজিস্টার্ড দলিলে কোন জমি ক্রয়কালে আপনি প্রথমেই যাচাই করবেন: যার কাছ থেকে আপনি জমিটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন, তিনি (দাতা) কিভাবে জমির মালিক হয়েছিলেন। দাতা যদি রেকর্ড সূত্রে মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি যাচাই করে দেখে নিবেন তিনি তার প্রাপ্যতার অধিক জমি বিক্রি করছেন কি না কিংবা ইত:পূর্বে এই জমি বিক্রি হয়েছে কি না। অবশ্য এটি

যাচাই করা বেশ কঠিন কাজ। তবে ‘স্মার্ট ভূমি রেকর্ড' চালু হওয়ার পর আপনি ভূমিসেবা কল সেন্টার ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে এটি যাচাই করতে পারবেন। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ড পত্র যাচাই করেও এ বিষয়ে কিছুটা তথ্য পাওয়া যেতে পারে । আপনার বিক্রেতা (দাতা) যদি নিজেই অন্য কারো নিকট হতে জমি ক্রয়পূর্বক নামপত্তন মূলে মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট নামপত্তন মামলাটির সত্যায়িত কপি তুলে এই জমির পরিমাণ এবং প্রাপ্যতা সঠিক আছে কি না তাও আপনাকে যাচাই করে দেখতে হবে।


ওয়ারিশদের সঠিকতা যাচাই

আপনার বিক্রেতা (দাতা) যদি ওয়ারিশসূত্রে মালিক হয়ে আপনার নিকট বিক্রি করেন তবে খুব ভালোভাবেই যাচাই করতে হবে: তিনি ওয়ারিশসূত্রে মালিকানার সঠিক অংশ বিক্রয় করছেন কিনা এবং তিনি তাদের কোনো ওয়ারিশ (বিশেষ করে বোনদের)-কে বঞ্চিত করে এই জমি আপনার নিকট বিক্রয় করছেন কিনা। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই ওয়ারিশদের সঠিকতা যাচাই করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে ওয়ারিশদের অংশ অনুযায়ী জমি সঠিক আছে কি না এটি নির্ণয় করার জন্য ‘উত্তরাধিকার' নামক একটি অ্যাপস রয়েছে যেটা দিয়ে খুব সহজেই আপনি নিজেই হিসেব করে দেখতে পারবেন।


উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে করণীয়

ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত কোন উত্তরাধিকারের নিকট হতে আপনি জমি কিনলে ওয়ারিশদের প্রাপ্যতা এবং কোন ওয়ারিশ বঞ্চিত হচ্ছে কি না, তা অবশ্যই যাচাই করে নিবেন। বিক্রেতাদের ওয়ারিশদের সম্মতি যাচাই করা খুবই জরুরি। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, একাধিক ভাইবোনের মধ্যে এক ভাই তার অংশ অনুযায়ী জমিটি বিক্রি করে দিল। কিন্তু বিক্রয়ের সময় অপর অংশীদারেরা কিছু না বললেও বেশকিছু দিন পর জমির ক্রেতা ঐ জমিতে যখনই বাড়িঘর তৈরি করতে যাবেন, ঠিক তখনই বাকী ভাই-বোনেরা এসে দাবি করবে ঐ দাগে তাদের অংশ রয়েছে। তাই ওয়ারিশসূত্রে জমি কেনার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই তাদেরকে বলবেন, রেজিস্টার্ড বণ্টননামা বা ওয়ারিশদের মধ্যে আপোষ না হলে আদালতের মাধ্যমে বণ্টননামা আপনাকে দিতে। বন্টননামায় যেভাবে জমির তফসিল উল্লেখ থাকবে দলিল সেভাবেই লিখতে হবে । বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বোনদের বঞ্চিত করে ভাইদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি বিক্রি করার প্রবণতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি কোন বোনের অংশীদার দাবি করে বসে, তবে এই জমি নিয়ে একটা মামলা-মোকদ্দমার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই আপনাকে বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করে দেখতে হবে ।


জমি ক্রয়কালে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়

আপনি যেভাবেই এই জমিটি কিনেন না কেন জমি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আপনাকে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই দলিল তৈরির সময় বা রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে যে কয়েকটি বিষয় আপনাকে আবশ্যিকভাবে মাথায় রাখতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিমাপসহ জমির পজিশন দলিলে উল্লেখ করানো। জমির অনেকগুলো দাগের মধ্য থেকে কোন একটি অংশ আপনার নিকট বিক্রি করা হলে প্রচলিত ভাষায় একে বলা হয় ‘কাতে’। এর অর্থ হচ্ছে অনেকগুলো দাগের মোট জমির নির্দিষ্ট অংশ উল্লেখ করে আপনার নিকট জমি বিক্রি করা হবে। কিন্তু বাস্তবে আপনাকে পজিশন বা দখলের অবস্থান দেখানো হবে একটা নির্দিষ্ট দাগ থেকে । তবে দলিলে এক দাগ এবং বাস্তবে অন্য দাগে দখল কিনা দেখে নিবেন। এ সকল ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই দলিলের হাত নকশায় আপনার জমির অংশের পজিশনটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ উল্লেখ করে পরিমাপসহ স্কেচ ম্যাপ চিহ্নিত করে দলিলে উল্লেখ করিয়ে নিবেন। ভবিষ্যতে এটি আপনাকে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি দিবে।


জমি কিনবেন নাকি মামলা কিনবেন

কিছু কিছু জমি আছে যা মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত থাকে। বিক্রেতা তথ্য গোপন করে এসব জমি বাজার মূল্য থেকে কম মূল্যে আপনাকে বিক্রি করার জন্য প্রলোভন দেখাবে। আপনি কখনই এ সকল মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত জমি কেনার উদ্যোগ নিবেন না। কমমূল্যে ক্রয় করে আপনি যে টাকা সাশ্রয় করবেন তার বহুগুণ টাকা মামলা-মোকদ্দমায় পরবর্তীতে আপনাকে ব্যয় করা লাগতে পারে।


সরকারি খতিয়ানভুক্ত জমি ক্রয় থেকে সাবধানতা

আপনি যে জমিটি কিনতে চান তা যেন হয় নিষ্কণ্টক । তাই জমি ক্রয়ের পূর্বে তা অর্পিত কিংবা পরিত্যক্ত জমির তালিকাভুক্ত জমি কিনা কিংবা বিগত কোন জরিপে সরকারের খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়েছিল কিনা এ বিষয়গুলো আপনি আবশ্যিকভাবে যাচাই করে নিবেন। অর্পিত, পরিত্যক্ত এবং সরকারের খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত কোন জমি আপনি কখনও ক্রয় করবেন

না ।


প্লট বা ফ্ল্যাটের অবস্থান হাতখসড়া ম্যাপে চিহ্নিতকরণ

কোন ল্যান্ড ডেভেলপার বা হাউজিং কর্তৃপক্ষের নিকট হতে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আপনি যে প্লট বা ফ্ল্যাটটি নিচ্ছেন বাস্তবে আপনার প্লট/ ফ্ল্যাট নম্বরটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে। প্লটে বা ফ্ল্যাট দলিলে আপনার প্লট/ ফ্ল্যাটের অবস্থান স্পষ্টভাবে হাতখসড়া ম্যাপে চিহ্নিত করিয়ে নিবেন ।


মালিকানার ধারাবাহিকতা এবং নকশা যাচাই

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকতার মাধ্যমে চলে আসছে। তাই আপনি শুধু হাল জরিপ এবং সর্বশেষ খাজনা রশিদ বা দাখিলা দেখেই জমি কিনতে আগ্রহী হবেন না । আপনি চেষ্টা করবেন এই জমির পূর্ব ধারাবাহিকতা একটু যাচাই করে পূর্ববর্তী জরিপগুলোর সাথে মিলিয়ে নিতে। কোন-না-কোন রেকর্ডে যদি এটি সরকারের নামে রেকর্ড হয়ে থাকে, তবে এই জমি আপনি কিনবেন না। কারণ কোন-না-কোন সময় এটি আপনার জন্য ঝামেলা তৈরি করবে।


স্মার্ট ভূমিসেবা

ভূমিসেবা পোর্টাল (land.gov.bd) এবং এর অধীন বিভিন্ন সেবার পোর্টালে নাগরিকগণের জন্য দেয়া আছে বিভিন্ন নির্দেশিকা ও প্রজ্ঞাপন। ভূমিসেবা পোর্টালের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য অনলাইনে উন্মুক্ত থাকায় আপনি সরাসরি তথ্য যাচাইসহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমিসেবা ফি পরিশোধ করতে পারবেন। এতে প্রতারিত বা বিভ্রান্ত হবার সুযোগ থাকবে না । নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান/ম্যাপ সরবরাহ সংক্রান্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন / নির্দেশিকা স্মার্ট ভূমি পিডিয়াতে দেয়া আছে। এগুলো জানা থাকলে আপনার জন্য ডিজিটাল ভূমিসেবা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া সহজ হবে। প্রয়োজনে সহকারী কমিশনার (ভূমি)'র সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের আলোকে আপনার জিজ্ঞাস্য বিষয়টি নিশ্চিত করে নিবেন ।


স্মার্ট নামজারি

দেশব্যাপী শতভাগ ই-নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে আপনি ঘরে বসেই নাম খারিজের জন্য আবেদন এবং হয়রানি বা কোনরূপ ভোগান্তি ছাড়াই নামজারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বর্তমানে প্রতি মাসে অনলাইনে প্রায় ২ লক্ষাধিক নামজারি নিষ্পত্তি হচ্ছে। ১ অক্টোবর ২০২২ থেকে ই-নামজারি সিস্টেমকে পুরোপুরি ক্যাশলেস ঘোষণা করা হয়েছে। সকল ভূমি অফিসে ম্যানুয়াল ডিসিআর-এর পরিবর্তে চালু করা হয়েছে সর্বত্র গ্রহণযোগ্য কিউআরকোড-সমৃদ্ধ ডিসিআর। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এখন থেকে ১৭ টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অনলাইনে দলিল করলে প্রয়োজনীয় তথ্য নামজারির জন্য প্রেরণ করা হবে। দলিলে উল্লিখিত মোবাইলে একটি কোড নম্বর এসএমএস এর মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে। ভূমিসেবা পোর্টাল থেকে (land.gov.bd) এ কোড নম্বরের আবেদনে অনলাইনে ৭০ টাকা প্রদান করে নামজারি করতে পারবেন। বিভিন্ন সিস্টেমের সাথে আন্তঃসংযোগ করে অতি শীঘ্রই ২য় প্রজন্মের স্মার্ট নামজারি সিস্টেম চালু হচ্ছে।


স্মার্ট ভূমি উন্নয়ন কর

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল land.gov.bd থেকে “ভূমি উন্নয়ন কর” আইকনে ক্লিক করে নিবন্ধন ফরম পূরণসহ আপনি এখন হয়রানি ছাড়া ভূমি অফিসে না এসেই পৃথিবীর যে-কোন প্রান্ত থেকে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সাথে-সাথেই আপনি কিউআর কোড-সমৃদ্ধ ডিজিটাল দাখিলা প্রাপ্ত হবেন যা ম্যানুয়াল পদ্ধতির দাখিলার সমমানের এবং সর্বত্র গ্রহণযোগ্য । শীঘ্রই অন্যান্য সিস্টেমসমূহের সাথে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমের আন্ত:সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ থেকে সারা দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইন হচ্ছে। জনগণের ব্যবহারের সুবিধার্থে জমির খতিয়ান নম্বরই হবে হোল্ডিং নম্বর।


স্মার্ট ভূমি রেকর্ড

এই সেবার মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে আপনার কাঙ্খিত রেকর্ড: জরিপ খতিয়ান/নামজারি খতিয়ান/মৌজা ম্যাপ খুঁজে বের করতে এবং সেই অনুযায়ী সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ডাক বিভাগ আপনার ঠিকানায় খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছে দিবে । সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য এ সেবাটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। পৃথিবীর ১৯২ টি দেশ থেকে কোন প্রবাসী সরাসরি কলসেন্টারে ফোন করলে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল অথবা “ই-খতিয়ান” অ্যাপ-এর মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করলে ডাকবিভাগ বিদেশে প্রবাসীগণের নিজ-নিজ ঠিকানায় খতিয়ান পাঠানোর ব্যবস্থা নিবে।


খতিয়ানের ধারাবাহিক ইতিহাস

আপনার জমির একটি খতিয়ানে পূর্বের সকল ভাগ-বাটোয়ারার তথ্য এখন উন্মুক্ত। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি কতবার ভাগ হয়েছে, কতজন নতুন মালিক যুক্ত হয়েছে, বর্তমানে কত অংশ অবশিষ্ট আছে, সর্বশেষ জরিপে কত অংশ নতুনভাবে নামজারি হয়েছে ইত্যাদি তথ্য জানা সম্ভব হবে। সর্বোপরি, জমি নামজারি হবার সাথে-সাথেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ানের ইতিহাস এ সিস্টেমে প্রদর্শিত হবে। এর ফলে প্রকৃত মালিক জমির ন্যায্য হিস্যা সহজে বুঝে পাবেন এবং অন্যায়ভাবে অন্যের জমি দখল করার সুযোগ রহিত হবে।


স্মার্ট ভূমি নকশা

সমগ্র বাংলাদেশের ১,৩৮,৪১২টি মৌজা ম্যাপকে ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। এই ম্যাপের উপরে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণীর একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা হচ্ছে। ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। এর ফলে নামজারির সাথে-সাথে ডিজিটাল ম্যাপ ও খতিয়ান স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হতে থাকবে। ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ অ্যাপ থেকে নাগরিকগণ তাদের জমির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, স্থানাংক তথা প্রকৃত অবস্থানও তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ই-নামজারির সাথে-সাথে জমির ধরন অনুযায়ী হোল্ডিং নম্বরসহ ভূমি উন্নয়ন করও নির্ধারিত হয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।


নাগরিকগণকে ডিজিটাল সেবায় সম্পৃক্তকরণ

১৬১২২ নম্বরে (বিদেশ থেকে +৮৮ ০৯৬১২৩ ১৬১২২ নম্বরে) ফোন করে কিংবা ঘরে বসেই land.gov.bd - এই পোর্টাল থেকে যে কোন সময় (২৪/৭) আপনি এখন ভূমি অফিসে না এসেই নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর এবং খতিয়ান সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ভূমি বিষয়ক যে-কোন পরামর্শ পেতে আপনি facebook.com/land.gov.bd এই সোস্যাল মিডিয়া পেইজেও লিখতে পারেন। অতি শীঘ্রই রোবোটিক ভয়েস বট চালু করা হচ্ছে কল সেন্টারের সাথে। আপনি নামজারি আবেদনের অবস্থাসহ ভূমি সংক্রান্ত অন্য যে কোন সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করবে। 


স্মার্ট ভূমি-পিডিয়া

নাগরিকদের ভূমি-তথ্যজ্ঞানে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্মার্ট ভূমি-পিডিয়া চালু করা হয়েছে। এই একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হতে ভয়েজ সার্চের মাধ্যমেও আপনি ভূমি সম্পর্কিত সেবা ও আইনী তথ্য পেতে সক্ষম হবেন ।


ডিজিটাল জরিপ

একই খতিয়ানের মধ্যে মাল্টিপল দাগ শেয়ার করা তথা হাতের লেখা খতিয়ান প্রথার অ্যানালগ পদ্ধতির উত্তরণ ঘটিয়ে ড্রোন দিয়ে ডিজিটাল জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই পটুয়াখালীতে একটি মৌজার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি দেশব্যাপী বিস্তৃত করা হবে।


অন্যান্য ডিজিটাল সেবা

মর্টগেজ সিস্টেমের মাধ্যমে সকল বন্ধকি জমির তথ্য যাচাই, অনলাইনে জলমহালের আবেদন দাখিল করা এখন অনেক সহজ । শীঘ্রই অর্থ বিভাগের আইবাস সিস্টেম থেকে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা সরাসরি ভূমি মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঢাকার তেজগাঁওস্থ ভূমি ভবনে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ‘স্মার্ট ভূমিসেবা কেন্দ্র' চালু করা হয়েছে। এরকম সেবা পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী বিস্তৃত করা হবে।


সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও স্বীকৃতি

ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন একদিকে যেমন মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি কমিয়েছে, ঠিক অন্যদিকে এই সিস্টেমগুলোর কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে বহুগুণে। অফলাইন থেকে অনলাইনে আসার কারণে শুধু ভূমি উন্নয়ন করই বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫৬%। ডিজিটাল ভূমিসেবা থেকে অনলাইনে সরকারের প্রতিদিন গড় রাজস্ব আদায় ৫ কোটি টাকার উর্ধ্বে। এসকল ডিজিটাল ভূমিসেবা সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২০ সালে ই-নামজারির জন্য অর্জন করেছে জাতিসংঘ জনসেবা পদক এবং ২০২২ সালে ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন করের জন্য পেয়েছে সম্মানজনক WSIS ও ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার।


২০২৬ সাল নাগাদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য

২০২৬ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্য: কোন খতিয়ানের দাগ শেয়ার হবে না, ভূমি নিয়ে কোন মামলা-মোকদ্দমা থাকবে না, সীমানা বিরোধ হবে প্রায় শূন্য, নাগরিকগণকে খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না, এনআইডি দিয়েই পাওয়া যাবে একজন নাগরিকের জমির সকল তথ্য আর জমি ক্রয়ের সাথে-সাথেই পাওয়া যাবে ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ঔনারশীপ' বা সিএলও। যে-সব জায়গায় একবার ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হবে, সেখানে ভবিষ্যতে আর জরিপ করার প্রয়োজন পড়বে না।